রাতে ঘুমানোর আগে রিলস দেখা—আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর ?
রাতের বেলা ঘুমানোর আগে ঘন্টার পর ঘন্টা রিলস দেখা আজকাল অনেকের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গেছে। শুরুতে মনে হয়, একদম ছোট্ট বিনোদন, সাময়িক আনন্দ। কিন্তু বাস্তবে এটা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে না, বরং শরীরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
হ্যাঁ, হয়তো আপনি ভাবছেন, আমি কিভাবে এই কথাটা বলছি? সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে—রাতের বেলা ঘুমানোর আগে একটানা রিলস দেখার ফলে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
হাইপারটেনশন কি?
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে—হাইপারটেনশন কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, হাইপারটেনশন হলো উচ্চ রক্তচাপ। ইংরেজিতে একে HTN বা HPN (Hypertension) বলা হয়। স্বাভাবিকভাবে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যখন সেটা অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন সেটাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন।
চীনের হেবেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৪,৩১৮ জন মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। এতে দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে রিলস দেখার ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আগেও বিজ্ঞানীরা খুঁজছিলেন—রিলস দেখার সঙ্গে রক্তচাপের কোনো সম্পর্ক আছে কি না। গবেষণায় দেখা গেছে, রিলস শুধু মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ নয়, সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি।
রিলসের মানসিক ক্ষতি
বেশ কিছুদিন ধরেই গবেষকরা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর রিলসের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বলছেন। করনাকালীন সময়ে এই ছোট ভিডিওগুলো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে টিকটক। জেন-জি ও জেন-আলফা এই দুই জেনারেশনের মানুষের মনোযোগ ধরে রাখতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—এই রিলস।
রিলস মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রমের মানসিকতাকেও প্রভাবিত করছে। বলতে গেলে, রিলস যতটা আনন্দ দিচ্ছে মনে হয়, ঠিক ততটাই মানুষের ক্ষতি করছে।
রিলস কিভাবে ঘুমকে প্রভাবিত করে
স্ক্রিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকানো যে কোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। দিনের বেলায় কিছুটা হলেও শরীর নড়াচড়া করে, কিন্তু রাতে যখন আমরা বিছানায় শুয়ে একটানা রিলস দেখি, তখন শরীর নড়াচড়া করে না। ফলে সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম আরও সক্রিয় হয়ে যায়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘুম আসে দেরিতে, আর দীর্ঘমেয়াদে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি তৈরি হয়।
কীভাবে বের হওয়া যায় এই চক্র থেকে
এখন এই পর্যায় থেকে বেরিয়ে আসার একটাই উপায় আছে। সেটা হলো—আপনি যতই রিলস দেখুন না কেন, তার পরেও যেন আকৃষ্ট না হন। আসল লক্ষ্য হলো রিলসের আসক্তিটা কমানো।
রাতের বেলা স্ক্রিন টাইম কমানো খুব জরুরি। সম্ভব হলে মোবাইলটা এক পাশে রাখুন। মোবাইল থেকে যে ব্লু লাইট বের হয়, সেটা মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে, ঘুম আসে দেরিতে।
আপনি যদি খেয়াল করেন, রাতের বেলা পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজে মন দিলে ঘুম ঠিকমত আসে। কিন্তু মোবাইল দেখলে ঘুম আসে না। তাই রাতে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে শুধু ঘুম ভালো হবে না, শরীরও থাকবে সুস্থ, মনও শান্ত।
শেষ কথা
ধীরে ধীরে রিলসের প্রতি আসক্তি কমানো সম্ভব। রাতের বেলা ঘুমানো ঠিক রাখলে পরের দিন আরও ফ্রেশ থাকবেন, চোখ আর মনকে বিশ্রাম দিতে পারবেন, আর শরীরের সুস্থতাও বজায় থাকবে। রাতের ঘুমই আসল পাওনা, রিলস নয়।